মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, মানুষকে সব কাজ নিয়ম মেনে করতে হয়। স্বামী-স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রেও আল্লাহ পাকের নিয়ম মেনে সহবাস করতে হয়।
স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের জন্যে সঠিক নিয়ম কি, কিভাবে সহবাস করতে হয়, কখন সহবাস করা হারাম, তা কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের সঠিক নিয়ত করা:
নিয়ত মানে মনোস্থির করা। মনে মনে কামনা করা যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্য মিলন করবো। এর মাধ্যমে নিজেকে যেনা থেকে বিরত রাখবো এবং সন্তান লাভের প্রার্থনা করবো। হাদিসে আছে, স্ত্রী মিলন করাও সাদকা। এর দ্বারা সাওয়াব লাভ করা যায়।
সময় আদর-সোহাগ করা:
শুরুতে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে চুম্বন, আলিঙ্গন, করে আদর করবে। এক্ষেত্রে উভয়ের সাড়া দেওয়া খুবই জরুরী। আদরের ফলে একে অপরকে মিলনের জন্য আগ্রহী করে তুলবে।
দোয়া পড়া:
মিলনের শুরুতে স্বামী-স্ত্রী উভইকে এই দোয়া পড়তে হয়-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
সহবাসের পজিশন:
نِسَآؤُکُمۡ حَرۡثٌ لَّکُمۡ ۪ فَاۡتُوۡا حَرۡثَکُمۡ اَنّٰی شِئۡتُمۡ ۫ وَ قَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ مُّلٰقُوۡہُ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অর্থ- তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। আর তোমরা নিজদের কল্যাণে উত্তম কাজ সামনে পাঠাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে । আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।(সূরা বাক্বারা-২২৩)
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, কাত হয়ে, সামনে থেকে, পিছন থেকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে মিলন করা যায়। তবে শর্ত হচ্ছে তা যৌনিপথে করতে হবে।
স্বামী উপরে আর স্ত্রীকে নিচে থেকে মিলন করা উত্তম ও প্রশান্তিদায়ক কিন্তু বাধ্যতামূলক না।যদি স্ত্রী উপরে আর স্বামী থাকে তাহলে গুনাহের কিছু নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে এই পজিশনে বীর্যপাত হলে বীর্য প্রস্রাব থলিতে যেতে পারে, যা কষ্টের কারণ হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের সঠিক সময়:
হারাম:
স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করা হারাম। স্ত্রীর হায়েজ নেসাফের সময় সহবাস করা হারাম। এ সময় সহবাস করা স্ত্রীর জন্য যেমন কষ্টদায়ক তেমনি স্বামীর জন্য অপ্রশান্তিদায়ক। এছাড়া রমযান মাসে দিনের বেলা, ইত্তেকাফের সময়, হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ও স্ত্রীর গর্ভপাতের ৪০ দিন সময় পর্যন্ত সহবাস করা হারাম।
আমাদের দেশে প্রচলন আছে পূর্ণিমা, আমাবস্যা, দিনের বেলা, শবে বরাতে, শবে কদরের রাতে সহবাস করা নিষেধ, এ কথার কোন ভিত্তি নেয়, এই সময় গুলিতেও সহবাস করা যাবে। এতে কোনো বাধা নেই বা গোনাহ হবে না।
ফরজ গোসলের:
সহবাসে বীর্যপাত হোক বা না হোক স্ত্রীর যনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করালেই গসল করতে হয়।মিলনের পরেই গোসল করে নেওয়া উত্তম। গোসল দেরি করেও করা যায়, সেক্ষেত্রে লজ্জাস্থান পরিস্কার করে ওজু করে নিতে হবে এবং নামাজের পূর্বে গোসল করে নিতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ